বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ: প্রভাব, লক্ষণ এবং প্রতিরোধে করণীয়

by | Apr 20, 2024 | Others | 0 comments

প্রতিকী ছবি: একজন ব্যক্তি তাপপ্রবাহের সময় তার মাথায় বরফের একটি বড় খন্ড বহন করছেন৷ ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন

আমাদের দেশে গরমের সময় তাপমাত্রা খুবই বেশি থাকে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা বেশিরভাগ সময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর ওপরে থাকে। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত গরম এবং সরাসরি সূর্যের নিচে থাকার কারণে সবচেয়ে ভয়ংকর সমস্যা যা হতে পারে সেটি হলো হিটস্ট্রোক। দীর্ঘক্ষণ উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার কারণে বা প্রচণ্ড গরমে কায়িক পরিশ্রম করার ফলে যদি শরীরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়ে যায় তাহলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। তাপমাত্রাজনিত এই ভয়ানক সমস্যা তখনই হতে পারে যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা তারও বেশি হয় এবং সেই তাপমাত্রা শরীর কমাতে না পারে। সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও ৪ বছরের কম শিশুদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের ঘন ঘন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি, তাদের সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে বের না হওয়াই ভালো। অনেক সময় হিটস্ট্রোক ধীরে ধীরে হতে পারে, তবে হঠাৎ করে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে তাই এই রোগের সম্ভাবনাও সমান হারে বৃদ্ধি  পাচ্ছে। পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা, শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস এর অভাব, হার্ট বা স্কিনের অসুখ ইত্যাদি কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে শনাক্ত করতে পারলে অনেক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ :
১​. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া।
২​. মাংসপেশিতে ব্যথা।
৩​. অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ঠোঁট, মুখ, জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া।
৪​. রক্তচাপ কমে যায় ও নাড়ীর স্পন্দন ক্ষীণ হতে থাকে।
৫​. খিঁচুনি, মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা অনুভূত
৬​. বমি বমি ভাব, রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
৭​. অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি।

যেহেতু এটি একটি জরুরি অবস্থা তাই এর চিকিৎসা দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই যা করা প্রয়োজন তা হলো রোগীর শরীর ঠান্ডা করা এবং ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাওয়া। সঠিক সময়ে হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা না হলে রোগীর মস্তিষ্ক, পেশি, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

অসুস্থ ব্যক্তির শরীর ঠান্ডা করতে –
১​. কাপড় পানিতে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।
২​. ফ্যান বা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে।
৩. খুব ঠান্ডা পানিতে রোগীর গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে।

হিট স্ট্রোক  প্রতিরোধে  আমাদের করণীয় :
১​. ঢিলেঢালা, হালকা রঙের সুতি পোশাক পরিধান করতে হবে।
​২. ঠান্ডা তরল পান করতে হবে এবং ডিহাইড্রেশন হওয়া প্রতিরোধ করতে হবে।
৩​. অ্যালকোহল আমাদের শরীর  দ্রুত ডিহাইড্রেট করতে পারে, তাই এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
৪​. শসা, তরমুজ, ডালিম এবং কলা বেশি বেশি খেতে হবে।
৫​. বাইরে থাকলে ছায়ায় নিয়মিত বিশ্রাম এবং ঘন ঘন তরল পান করতে হবে।
৬.​ সম্পূর্ণ আচ্ছাদন, কিন্তু ঢিলেঢালা পোশাক, ছাতা, টুপি এবং সানগ্লাস দিয়ে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
৭.​ দিনের বেলায় যথাসম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত এবং  রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
৮.​ প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৯.​ সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০. ​দিনের বেলায় একটানা শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে, সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা  বা গোসল করতে হবে।
১১.​ প্রস্রাবের রঙের দিকে নজর রাখতে হবে তা হলুদ বা গাঢ় হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
১২.​ ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম ঠান্ডা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৩. ​বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : সনিয়া খাতুন

ক্লাব পজিশন : কার্যনির্বাহী সদস্য

ডিপার্টমেন্ট : ফলিত গণিত

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *