আগ্নেয়গিরি (Volcano)
বিজ্ঞানীদের সুদুরপ্রসারি গবেষণা এবং নানাবিধ যুগান্তকারী আবিষ্কার বিজ্ঞানকে আমাদের দোরগোড়ায় এনে দিয়েছে। আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে কৌতুহল বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য বেশ পুরোনো। আমরা অনেকেই আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জেনে ভুল ধারণা করে বসি। আজকের আলোচনা থেকে আমরা অনেকেই আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে সুষ্ঠু ব্যাখ্যা পেয়ে যাবো।
আগ্নেয়গিরি হলো বিশেষ ধরনের পাহাড় যার ভেতর দিয়ে ভূ-অভন্ত্যরের উত্তপ্ত ও গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস বেরিয়ে আসতে পারে। এটি একটি ভৌগোলিক প্রক্রিয়া।
কোনো কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ গরম বাতাস,জলীয় বাষ্প,গলিত শিলা, কাদা,ছাই,গ্যাস প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। নির্গত এইসকল পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে যার কিছুটা ফাটলের চারপাশে এসে ধীরে ধীরে জমা হয়ে মোচাকৃতি ধারণ করে। তখন একে ” আগ্নেয়গিরি ” বলে। আগ্নেয়গিরিকে ইংরেজিতে Volcano বলা হয়।
আগ্নেয়গিরি থেকে ভূ-গর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্ন্যুৎপাত (Eruption)। আগ্নেয়গিরির বহিস্থ যে মুখ বা নির্গমনপথ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, তাকে জ্বালামুখ(Crater) বলে। প্রতিবছর প্রায় ৬০ টি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় অর্ধ সহস্র সক্রিয় বা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে। যে সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদেরকে মৃত বা নির্বাপিত আগ্নেয়গিরি বলে।এছাড়াও বর্তমানে সক্রিয় নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে অগ্ন্যুদ্গীরণ করতে পারে এমন আগ্নেয়গিরিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। ভূ-অভন্ত্যরে সঞ্চিত তরল শিলাকে ম্যাগমা বলে, আর যে তরল শিলা ভূ-পৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে তাকে লাভা বলে।
উদ্গীরণ ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা হয়।
১. জাগ্রত আগ্নেয়গিরিঃ যেসব আগ্নেয়গিরির মুখ সদায় নিয়মিত ভাবে ধোঁয়া, ছাই,গলিত লাভা গ্যাস থাকে,সেসকল আগ্নেয়গিরিকে জাগ্রত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমনঃ ছিছিলব মাউন্ট এটনা।
২. সুপ্ত আগ্নেয়গিরিঃ যেসকল আগ্নেয়গিরির আগে উদ্গীরণ হয়েছিলো, কিন্তু বর্তমানে সক্রিয় অবস্থায় নেই, কিন্তু যেকোনো সময় উদ্গীরণ হবার সম্ভাবনা আছে, সেসব আগ্নেয়গিরিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমনঃ জাপানের ফুজি পর্বত।
৩. লুপ্ত আগ্নেয়গিরিঃ যেসব আগ্নেয়গিরি কোন একসময় জাগ্রত ছিল কিন্তু আগামীতে বা ভবিষ্যতে এর অগ্ন্যুৎপাত হবার কোন সম্ভাবনা নেই,সেসকল আগ্নেয়গিরিকে লুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলা হয়। যেমনঃ আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো।
কখনো কখনো লুপ্ত ও সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখে জল জমা হয়ে একটা হ্রদের সৃষ্টি হয়। এধরনের হ্রদকে আগ্নেয়গিরি হ্রদ বলে।
আগ্নেয়গিরি উৎপত্তির একটি কারণ হলো ভূগর্ভে থাকা জলীয় বাষ্প এবং অন্যান্য বাষ্পের প্রচন্ড চাপ।তেজস্ক্রিয় উপাদান যেমনঃ রেডিয়াম ইউরেনিয়াম এদের অবিরাম তাপ বিকিরণের ফলে ভূগর্ভের উত্তাপ বাড়ে ও ইহার বিভিন্ন উপাদানসমূহ তরল হলে আয়তন বাড়ে।তার ফলে কোনো সুড়ঙ্গ বা ফাঁটল দিয়ে এই উত্তপ্ত পদার্থসমূহ উপরে উঠে আসলে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করতে পারে। আবার ভূগর্ভের কোথাও কিংবা রাসায়নিক কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হলে সেই বাষ্প পৃথিবীর উপরি ভাগের দূর্বল অংশের চাপের কারণে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করতে পারে।
জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে যেগুলো তাদের পরিচিতি হলো এরূপঃ
১. ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি – সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ১৯৪৪ সালে।
২. জাপানের সাকুরাজিমা আগ্নেয়গিরি – ছয় বছর ধরে নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত ঘটে চলেছে।
৩. কঙ্গোর নিইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরি – ২০০২ সালে শেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
৪. হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মউনা লোওয়া আগ্নেয়গিরি – এটি থেকে প্রায় সারাবছরই লাভা উদ্গীরণ হয়।
৫. গুয়াতেমালার সান্তা মারিয়া আগ্নেয়গিরি – ১৯০২ সালে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়।
৬.ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সিনাবুং আগ্নেয়গিরি – ২০২১ সালের মার্চ মাসে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, যদিও পূর্বাভাস থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নগন্য।
৭.গুয়াতেমালার ফুয়েগো আগ্নেয়গিরি – ২০১৮ সালের জুন মাসে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
নামঃ সামিয়া রহমান
ডিপার্টমেন্টঃ এপ্লাইড ম্যাথম্যাটিকস
ক্লাব পজিশনঃ অর্গানাইজার
0 Comments