রাসেল ভাইপার কি?
রাসেল ভাইপার (Daboia russelii) Viperidae পরিবারের অত্যন্ত বিষাক্ত স্থলজ সাপ। এটি ভারত থেকে তাইওয়ান ও জ্যভা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এটি প্রায় কৃষি জমিতে বিদ্যমান যেখানে মানুষের সংস্পর্শ এবং ইঁদুরের উপদ্রব থাকে। রাসেল ভাইপার সর্বাধিক ১.৫ মিটার (৫ ফুট) বৃদ্ধি পায়।
রাসেল ভাইপার চেনার উপায়:
রাসেল ভাইপার সাপের দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট সরু হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা ত্রিকোনাকার। মাথার তুলনায় ঘাড় অনেকটা সরু। শরীরের রঙ বাদামী, হলদে বাদামী অর্থাৎ কাঠ রঙের হওয়ায় শুকনো পাতার মধ্যে এই সাপ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। সাপটির জিহ্বার রঙ বাদামী ও কালো। এদের বিষদাঁতের দৈর্ঘ্য ১৫-১৬ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রাসেল ভাইপার সাপ কোথায় থাকে?
এটি পশ্চিমবঙ্গের জেলায় বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগণা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় দেখা যায়। আগে শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে দেখা গেলেও বর্তমানে তা পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা ও চরসমূহে বিস্তার লাভ করেছে।
রাসেল ভাইপার কামড়ের চিকিৎসা?
অ্যান্টিভেনম চিকিৎসা:
রাসেল ভাইপার দ্বারা প্রদত্ত বিষকে কার্যকরভাবে নিরপেক্ষ করার জন্য অ্যান্টিভেনম যথেষ্ট।
রাসেল ভাইপার ভেনম কিভাবে কাজ করে?
রাসেল ভাইপার ভেনম (RVV) ফ্যাক্টর এক্সকে সক্রিয় করে যা ফ্যাক্টর V, প্রোথোম্বিন, ফসফোলিপিড এবং ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে ফাইব্রিন ক্লট সৃষ্টি করে।
রাসেল সাপের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় কী?
যেকোনো সাপে কাটলে ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ ওঝারা বিষ নামাতে পারেন না। আবারো বলছি ‘ওঝারা বিষ নামাতে পারেন না’। রাসেল ভাইপার শতকরা ৯৯ ভাগ কামড়েই এরা বিষ প্রয়োগ করে। তাই কবিরাজের কাছে না গিয়ে ১০০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিভেনম দিতে হবে। সাপে কামড়ানোর পরবর্তী ১০০ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম পুশ করলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%। রাসেল ভাইপারের বিষে আক্রান্ত ব্যক্তির কামড় খাওয়া হাত বা পা ফুলে ওঠে। তাই হাত-পায়ে আংটি, বালা বা ব্রেসলেট জাতীয় কিছু থাকলে সাথে সাথে খুলে দিতে হবে। নাহলে ফোলা হাত থেকে আংটি-চুড়ি-ব্রেসলেট খোলা সম্ভব হবে না। রাসেল ভাইপারসহ ভাইপার জাতীয় সাপ হেমোটক্সিন বিষধারী যা রক্তের উপর প্রভাব ফেলে। রক্ত জমাট বাঁধতে না পেরে অনবরত ক্ষরিত হয়৷ তাই এ জাতীয় সাপের ছোবলে একদমই বাঁধন দেওয়া যাবে না। নইলে পচন ধরা আরও সহজ হয়ে যাবে ৷
রাসেল সাপ দেখলে নিরাপদে সরে যাওয়াই উত্তম। তবে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে এর থেকে বাঁচা সম্ভব:
১. আশেপাশে পরে থাকা পুরাতন গাছের নিচে খেয়াল না করে হাত দেবেন না।
২. ধান কাটার সময় গামবুট ব্যবহার করবেন।
৩. ধান কাটা শুরুর আগে হাড়ি-পাতিল বা অন্য কিছু দিয়ে প্রচণ্ড শব্দ করবেন, যেন সে ভয়ে পালিয়ে যায়।
৪. যেহেতু এরা খুবই হিংস্র, তাই যেসব এলাকায় বেশি দেখা যায়; সেসব এলাকায় সচেতনভাবে চলাফেরা করা।
৫. এ সাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করলে সামনে থেকে সরে যাওয়া।
লেখক : মোঃ ইয়াছিন খন্দকার ইমন
ক্লাব পজিশন : সমাজকল্যাণ সম্পাদক
ডিপার্টমেন্ট : Information and Communication Engineering
0 Comments