২২ ডিসেম্বর, যাকে আমরা শীতের সংক্রান্তি হিসেবেই জেনে থাকি (Winter Solstice), খুব স্বাভাবিক ভাবে এই দিনটি জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পৃথিবীর গতিবিদ্যার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে সূর্যের অবস্থান, পৃথিবীর ঢাল, এবং কক্ষপথের গতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য পরিমাপে। উত্তর গোলার্ধে তখন রাত হয় দীর্ঘতম এবং দিন হয় ক্ষুদ্রতম।
পৃথিবীর ঢাল:
পৃথিবী তার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে কাত হয়ে ঘোরে। এই কাত হয়ে ঘুরার কারণ হলো পৃথিবীর অক্ষ-মেরুর প্রতি ঝোঁক। মজার বিষয় হলো, এটিই পৃথিবীর ঋতুচক্রের ও দিনরাতের তারতম্যের প্রধান কারণ। শীতকালে সূর্য উত্তর গোলার্ধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার দরুন সূর্যের আলোর তীব্রতা কমে যায় ও দিন ছোট হয়।
সূর্যের অবস্থান:
২১ ডিসেম্বর পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সূর্য ধনুরাশি (Sagittarius) নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে সবচেয়ে নীচু কোণে থাকে।আর এই বিশেষ অবস্থানটি জ্যোতিষ্কীয় স্থান (Tropic of Capricorn) নামেই পরিচিত। সূর্যের এই অবস্থানের জন্যই শীতকালে উত্তর গোলার্ধে দিনের আলো কম সময় স্থায়ী হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথ ও দিন-রাতের দৈর্ঘ্য:
উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীর ঘুর্ণনের জন্য সূর্য কখনো পৃথিবীর কাছে আসে (Perihelion) এবং কখনো দূরে সরে যায় (Aphelion)। শীতের সংক্রান্তটির সময় সূর্য পৃথিবীর কাছে থাকলে ও উত্তর গোলার্ধে পৃথিবীর ঢালের কারণে রাত দীর্ঘ হয়।
সূর্যের উচ্চতা ও ছায়ার প্রভাব:
উত্তর গোলার্ধে শীতের সংক্রান্তির দিনে সূর্যের উচ্চতা থাকে সবচেয়ে কম। তখন সূর্যের কিরণগুলো হরাইজনের সাথে তীক্ষ্ণ কোণে পড়ে, ফলে ছায়া দীর্ঘ হয়।আর এজন্যই শীতকালে সূর্যের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম মনে হয়।
আর্কটিক সার্কেল:
আর্কটিক সার্কেল হলো পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের একটি কাল্পনিক রেখা যা ৬৬.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। এই অঞ্চলে শীতের সংক্রান্তির সময় সূর্যের আলো সরাসরি পৌঁছায় না। ফলে সেখানে রাত পুরো ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়,অর্থাৎ Polar Night ঘটে। আর তখন পৃথিবী তার অক্ষে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে কাত হয়ে থাকে।
প্রাচীন সভ্যতায় শীতের সংক্রান্তি:
শীতের সংক্রান্তির সময় সূর্যের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারী ব্রিটেনে “স্টোনহেঞ্জ” পাথরের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও মায়া সভ্যতায়, রোমান সভ্যতায় দীর্ঘতম রাতকে (২২- ডিসেম্বর) ঘিরে ” সাটার্নলিয়া” উৎসব পালন করা হতো।
বাংলাদেশের মতো মধ্য-অক্ষাংশে অবস্থিত দেশগুলিতেও একই রকম ভাবে ২২-ডিসেম্বর সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দূরে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তি রেখার দিকে সরে যায় ও সরাসরি আলো দেয়; ফলে উত্তর গোলার্ধে সূর্য ওঠার ও অস্ত পাওয়ার সময়ের ব্যবধান কমে যায়। এই সময়, বাংলাদেশে (২২-ডিসেম্বর) দিন প্রায় ১০ ঘণ্টা ৩১ মিনিট দীর্ঘ হয় ও রাত প্রায় ১৩ ঘণ্টা ২৯ মিনিট।
২২ ডিসেম্বর, শীতের সংক্রান্তি কেবল একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, এটি প্রকৃতির সাথে বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও জীবনের এক অপূর্ব মিলনস্থল। শীতের সংক্রান্তি আমাদের শেখায়, রাত যত দীর্ঘই হোক; নতুন দিনের সূর্যোদয় সবসময় নিশ্চিত।
Writer: Musmmat Somiya Akther
Dept. : Applied Mathematics
Session:2023-2024
Club position: Organizer
0 Comments