রাতে হঠাৎ আপনার ক্ষুধা পেলো, আপনি রান্নাঘরে হাতাহাতি করে একটা ক্যানজাত খাবার পেলেন।এদিক সেদিক নাড়াচাড়া করে ক্যান খুলে গন্ধও নিয়ে দেখলেন ঠিকঠাক আছে। ক্ষুধার কারণে খেয়ে ফেললেন পুরোপুরি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর আপনার সমস্ত শরীর শিথিল হয়ে আসলো, চোখের পাতা তুলতে পারলেন না, বমি বমি ভাব হতে লাগলো,কথায় জড়তা চলে আসলো এবং পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসলো। দুর্ভাগ্য ক্রমে যদি আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে আপনার মৃত্যুও হতে পারে।
উপরে এতগুলো কথা হচ্ছিলো “বটুলিজম” রোগ নিয়ে। এর জন্য দায়ী বটুলিনাম টক্সিন, যেটি তৈরি করে clostridium botulinum নামে একটি ব্যাকটেরিয়া। অনুপযুক্ত উপায়ে কৌটায় সংরক্ষিত খাবার কিংবা গাজন প্রক্রিয়ায় তৈরি খাবারে এই অনুজীবের বৃদ্ধি ঘটতে পারে। কেন এটি ক্যানজাত সংরক্ষিত কিংবা গাজন প্রক্রিয়াতেই দেখা যায়? কারণ এটি অবায়বীয় অণুজীব অর্থাৎ অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে এটি বংশবিস্তার করে এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই নিজের চারিদিকে আবরণ বা স্পোর গঠন করে ফেলে। এই কারণেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বদ্ধ পাত্রই এদের উপযুক্ত পরিবেশ।WHO এর মতে সাত রকমের ভ্যারিয়েন্ট মানুষ সহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী ও পাখিতে রোগ সৃষ্টি করে। এদের কে A-G ক্যাটাগরি তে ভাগ করা হয়। এর মাঝে Type A, B, E এবং মাঝে মাঝে F মানুষে বটুলিজম সৃষ্টি করে এবং Type C, D, E অন্য স্তন্যপায়ী এবং পাখিতে বটুলিজম সৃষ্টি করে।
বটুলিজম থেকে বাচার উপায় কি? বটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া এসিডিক পরিবেশে বাঁচতে পারে না। তাই সংরক্ষিত খাবার যদি 4.6 pH এর নিচে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে এটি জন্মাতে পারে না।ভিনেগার(এসিটিক অ্যাসিড) কিংবা অন্যান্য অনুমোদিত খাদ্য সংরক্ষক ব্যবহার করা যাবে।লবণ,তেল,আদা এসব থাকলেও এটি জন্মাতে পারেনা।তবে বটুলিনাম তাপ সংবেদী হওয়ায় ৮৫°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫ মিনিটের বেশি রান্না করা হলে এটি মারা যায়,কিন্তু বটুলিনাম স্পোর(খোলস আবৃত বটুলিনাম) অধিক তাপ প্রতিরোধী হওয়ায় এটি তাপ প্রয়োগে ধ্বংস করা যায় না। এইজন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং তাপমাত্রায় শুরু থেকেই সংরক্ষণ করতে হয় যেন স্পোর গঠিত করতে না পারে।
আমাদের মাঝে একটা ভুল প্রথা অনেক জায়গায় ই ছড়িয়ে আছে,বাচ্চা হওয়ার পর ছোট বাচ্চাকে মধু খেতে দেওয়া হয় যেন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে পারে।কিন্তু এটিই যে তার কাল দাঁড়াবে সেটা আমরা চিন্তাই করি না। এক বছরের কমবয়সী বাচ্চাদের পরিপাকতন্ত্র একদমই অপরিপক্ব থাকে,ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল থাকে।স্পোর কন্টামিনেটেড মধু খেয়ে তারা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে।
উপরে তো শুধু এর বিষক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো,এবার না হয় এর ফার্মাসিউটিক্যাল ইউজ টা উল্লেখ করা যাক।বটুলিনাম ব্যাক্টেরিয়া অনেক পিউরিফাই করে এবং খুবই লঘু দ্রবণে ব্যবহার করে ত্বক কুঁচকে যাওয়া রোধ করা হয় যাকে বোটক্স বলা হয় কসমেটিকস এর ভাষায়।এই বোটক্স হলো বটুলিনাম নিউরোটক্সিন এর এক্রোনিম।বোটক্স ব্যবহার করে শরীরের মসৃণতা, কমনীয়তা ফিরে আনা যায় এবং বয়সের ছাপ দূর করা যায়।তবে এটি পটেন্ট ড্রাগ হওয়ায় এর নেতিবাচক দিক আছে।এটিকে নিউরোটক্সিন বলা হয় কারণ এটি সরাসরি মিউরন বা নার্ভাস সিস্টেমে অ্যাটাক করে।আর হিমোটক্সিনগুলো রক্তের সাথে প্রবাহিত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। তো বোটক্স নিউরোটক্সিন হওয়ায় এটির ব্যবহারে মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বটুলিজম রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা খুবই সাধারণ।বটুলিনাম এর অস্তিত্ব যদি রক্তের সিরাম,মল কিংবা খাবার থেকে পাওয়া যায় তবে অতিদ্রুত থাকে এন্টিটক্সিন দিতে হবে। নয়ত বটুলিজম প্যারালাইজড থেকে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বটুলিজম প্রতিরোধে ডব্লিউএইচও (WHO) এর ৫ টি মূলনীতি অনুসরণীয়
১.পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা
২.রান্না খাবার ও কাচা খাবার আলাদা রাখা
৩.কম সেদ্ধ খাবার না খাওয়া,খাবার ভালো ভাবে সেদ্ধ করা
৪.সঠিক তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ
৫.পরিষ্কার পানি, খাবার এর কাঁচামাল ব্যবহার করা
লেখক : মো: রুহুল আমিন
ক্লাব পজিশন : অর্গানাইজার
ডিপার্টমেন্ট : ফার্মেসি
0 Comments